রাতের বেশ্যা দশ মিনিটের জন্য অন্ধকার গলি কিংবা ওভারব্রিজে তার অভিজ্ঞ চোখে খুঁজছে একজন ক্রেতা -নিজের শরীর বিকেয়ে দু'মুঠো অন্ন যোগাবে বলে!খদ্দেরের অভাবে তার ভীষণ মন খারাপ হয়...ছটফট করে খুঁজতে থাকে এ গলি থেকে ও গলি।তবুও সে খুঁজছে...
বাবার কাঁধে বসে খাওয়া ছেলেটা বেকার শব্দ শুনতে শুনতে নিজের প্রতি এক তীব্র ঘৃণা নিয়ে দিকবেদিক ছুটছে একটা চাকরীর খোঁজে। পত্রিকার পাতায় পাতায় চাকরীর বিজ্ঞাপন অথচ ছেলেটার চাকরী হয়না।তবুও সে বেকার শব্দটার দ্বায়ভার থেকে মুক্তি চায়...!
চেহেরা কালো বলে পাত্র পক্ষ মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় যেই মেয়েটার রাতে ঘুম হয়না ;সেই মেয়েটা একটু সুন্দর হতে কতো চেষ্টাই না করেছিলো।অথচ মেয়েটার মন ছিলো অনেক ভালো।কে দেখে সেই ভালো?
ডিভোর্সি নারী জানে কেমন করে রাতের ভেজা বালিশ সকালে শুকাতে দিতে হয়।রোজ রোজ বুকের যন্ত্রনা চেপে সবার সাথে হাসতে হয়...তবুও সে একটু শুদ্ধহাসির খোঁজে দিশেহারা।সে একটা ভালো পুরুষের সান্নিধ্য চায়।কিন্তু আফসোস তার দিকে কেউ ভালোবাসার দৃষ্টি দিতে চায়না।যারা দৃষ্টি দেয়, তাদের চোখে সে দেখে কামুকতা লালসায় ভরা এক জোড়া পরকীয়ার চোখ।তবুও সে সুখী হতে চায়... যদি মনের রাজ্যে একটু সুখী হওয়া যায়।
মুক্তিচায় বিনা অপরাধে শাসকের জেলখানায় মিথ্যে মামলায় বন্দি হওয়া রাজনীতির কালো থাবায় অতিষ্ঠ জীবন।
ডিপ্রেশনে ভোগা ছেলেটাও খুঁজছে মুক্তির পথ!নিকোটিন পুড়িয়ে কলিজায় ক্ষত হয়েছে তবুও সে এই ঘোর থেকে বের হতে চায়...কিন্তু ছেলেটা অসহায়!
একটা ছেলেকে বিশ্বাস করে নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে অতঃপর চরমভাবে ঠকে যাওয়া মেয়েটা মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে এসেছে আরেকজোড়া বিশ্বস্ত হাত পাবে বলে!আরেকবার কাউকে বিশ্বাস করবে বলে।
ভালোবেসে প্রেমিকার নামে বুকের জমিন লিখে দিয়ে নিষ্ঠুর ভাবে পরাজিত হওয়া ছেলেটাও স্বপ্ন দেখে সানাই বাজিয়ে গ্রাম কাঁপিয়ে একদিন সে বিয়ে করবে তার চোখে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাকে।
বিশাল অট্টালিকার মধ্যে থেকেও মনের রাজ্যে অসুখী হয়ে ছটপট করছে নিতাই বাবুর সুন্দরী স্ত্রী পঞ্চমী রানী।এই যে তার টাকা পয়সা সব কিছুই রয়েছে তবুও তার কিসের যেন একটা অভাব,কিসের যেন একটা শুন্যতা!এই শূন্যতাবোধ পঞ্চমীকে গিলে খাচ্ছে ক্রমশ। মেয়েটা বুঝে গেছে মনের শান্তিই আসল।মেয়েটা ভালোবাসা খুঁজছে... খুঁজছে মনের শান্তি।
গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদ্দুরে ক্লান্ত পথিক আসবে... এক গ্লাস লেবুর শরবত খাবে এই আশায় শরবত নিয়ে বসে থাকা ছেলেটা আকাশে মেঘ দেখলে কেঁদে উঠে।সে রোদ চায়... প্রচুর রোদ...
মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলেটা মধ্যবিত্ত শব্দ থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছে। নিম্নবিত্ত ছেলেটা জানে নিম্নবিত্ত শব্দটা তার মাসতুত ভাই তবুও সে একটু ভালো থাকার পথ খুঁজছে।
মেধাবী গরীব ছাত্রটা খুঁজছে একটা টিউশনি, রাজপথ কাঁপানো ছেলেটা খুঁজছে তার যোগ্য পদ।সবাই খুঁজছে... খুঁজতে খুঁজতে দিশেহারা!
রোমান্টিক প্রেমিকযুগল চায় একটু বৃষ্টি নামুক,প্রেয়সীর হাত ধরে রাজপথ ভিজুক,ভিজুক যত গ্রাম পল্লী আর মাঠঘাট ।
মাথার উপর ছাউনি না থাকা কুসুমের মা -৩ বছরের কুসুমকে বুকে জড়িয়ে প্রভুর দরবারে হাত তোলে এই মেঘে যেন বৃষ্টি না হয় ।
ছাতাবিহীন ক্লান্ত পথিক খুঁজে ফিরে একটা ছায়াধর বটগাছ।
ডাকাত দল খুঁজছে বিদেশ ফেরত টাকাওয়ালা বাবুরামকে।ছিনতা
ইকারী খুঁজছে যাকে তাকে। এভাবেই চলছে খোঁজাখুঁজি...
লেখকেরা খুঁজে একটা বিশ্বস্ত প্রকাশক,নিঃস্বার্থ কিছু পাঠক!পাঠক খুঁজে ভালো কিছু বই...ভালো কিছু লেখক।
রাস্তার টোকাই খুঁজে একটা খালি বোতল,ফুসকা বিক্রেতা খুঁজে কিছু ফুসকাখাদক।
এভাবেই আমরা সবাই খুঁজছি...খুঁজতে খুঁজতে আমরা ক্লান্ত,বড্ড ক্লান্ত,তবুও আমরা খুঁজছি।আমাদের প্রত্যেকের জীবনটাই অপূর্ণতা দিয়ে ভরপুর, এভাবে অশান্তির দাবানল থেকে শান্তির পথে,আঁধার থেকে আলোর পথে,বন্দি থেকে মুক্তি চাইতে চাইতে একদিন অসীম শূন্যতায় পাড়ি দেব।
,
লেখক: মাস্টার দ্যা নাঈম