Tuesday, December 19, 2017

পথশিশুরাও মানুষ

অনিশ্চিত জীবনের দিকে তারা ছুটে চলছে অবিরাম। বহির্মুখী উন্মত্ততা তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত পথেঘাটে।
ব্যস্ত এই শহরে অসংখ্য মানুষের ছুটোছুটি। নিত্যপ্রয়োজনে গ্রাম থেকে লোকেরা পরিবার পরিজন নিয়ে এই শহরে পাড়ি জমায়। সৎ, অসৎ/নৈতিক, অনৈতিকতার সংমিংশ্রণেই বিচিত্র পৃথিবী। মানুষের ভেতর থেকে যখন মানুষ্যত্ববোধটুকু উঠে যায়, তখন, সে আর মানুষ থাকে না। সে হয়ে যায় মানুষরূপী পশু। আমাদের আশেপাশে অনেক লোকের সমাগম, সহবাস। সামাজিক দায়বদ্ধতা এড়িয়েও মানুষ বিভিন্ন উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন অপকর্মে মত্ত।
পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকার সবচেয়ে মৌলিক বিষয় হলো খাদ্য। একজন মানুষ যখন এই সুবিধাটুকু থেকে বঞ্চিত হয় ঠিক তখনি তার মাঝে অনৈতিকতার আক্রোশ জন্ম নেয়। আমার, আপনার মতো মানুষেরা যখন তাদের একবেলা খাবারের পরিবর্তে পেটে লাথি মেরে দিই, একটি রুটির পরিবর্তে তাদের মা-বাপ তোলে গালি দিই। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিই নিজ আঙ্গিনা থেকে। একজন পাঁচ/ছয় বছরের শিশু যখন বাল্যকাল থেকে এসবের মুখোমুখি হয়, তখন, সে কোনদিকে যাবে? তার সামনে অনিশ্চিত জীবন। কোথায় যাবে সে? সে নিজেও জানে না। ছোটকাল থেকে মানুষের বকাঝকা আর লাথি গুতো খেয়েই তারা বড়ো হয়। এক পর্যায়ে তারাই দেশের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ছিন্তাই, অপহরণকারী, চুরিডাকাতি, খুনখারাবি তো তাদের মধ্য থেকেই তৈরি হয়। কিন্তু, একটা কথা থেকেই যায়। তাদের পরিচালনা বা দিকনির্দেশনাকারীরা অবশ্য মুখোশধারী কেউ।
ঢাকা শহরের অলিগলিতে, ফুটপাথের কিনারে, স্টেশন, বাস স্টপে। সবখানে তাদের আনাগোনা। ছোটছোট বাচ্চাদের যখন দেখি মানুষের কাছে হাত পাততে, তখন লজ্জায় মাথা নুইয়ে আসে।
ঘৃণায় গা রি রি করে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে তারা আসেনি, তাদের আনা হয়েছে। সমাজের মানুষরা তাদের আনতে বাধ্য করেছে! এমন অনাথ শিশুরা তো জন্মই নিয়েছে কোনো কুলাঙ্গার আর কুলাঙ্গিরিনীর মিলনে। আর তাদের দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে দিনশেষে সব টাকা লুটে নিয়ে নেয় এক দল অপরাধচক্র। বিনিময়ে তাদের সামান্য আহার আর স্বল্প টাকা দেওয়া হয় হয়তো। গোপন সূত্রে জানা গেছে এই অপরাধচক্র বাহিনীরা গ্রাম অঞ্চল থেকে বা বিভিন্ন জায়গা থেকে বাচ্চাদের অপহরণ করে। অতঃপর সুযোগ বুঝে কোনো একসময়ে তাদের হাত পা ভেঙ্গে পঙ্গু বানিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দেয় ভিক্ষাবৃত্তির জন্য।
মানুষ যেন আজ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে গেছে। ছোটোছোটো বাচ্চারা এহেন ঘৃণ্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে ভবিষ্যতে মানুষের মানিব্যাগ নিয়ে দৌড়ে পালায়। বড়ো বড়ো সন্ত্রাস তো তারাই হয়। এখানে যদি আমরা বলি তারা দেশের জন্য হুমকি। তাহলে, আমিও বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলব হ্যাঁ, কিন্তু, দেশকে এই হুমকি থেকে বাঁচাতে হলে তো তাদের মারধর বা জেল হাজতে ঢুকিয়ে লাভ নেই। প্রথমে তাদের দিকনির্দেশনাকার
ী মুখোশধারী লোকদের খুঁজে বের করে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করে দেওয়া উচিৎ। কিন্তু, কিছু বিষয় আমাকে ভিষণভাবে ভাবিয়ে তোলে। জেল হাজতে ঢুকালেই যে তারা বড়ো কোনো পীর আউলিয়া হয়ে বেরুবে সেটা কিন্তু প্রশ্নবোধক থেকেই যায়!
তবে, আমরা চেষ্টা তো করে দেখতে পারি!
আমরা যুবকরাই তো ভবিষ্যতে এদেশ পরিচালনা করব। আমাদের সুস্থ চিন্তাভাবনা দ্বারাই আমরা দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম হব। কিন্তু, আমাদের মাঝে যদি সুস্থ চিন্তাভাবনা ছাড়া ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ না হয়ে বরং যারা একাজের প্রতি উৎসাহী তাদের হেয় প্রতিপন্ন করি, তাহলে তো আমরা নিজেরাই অসচেতন। আর অসচেতন ব্যক্তি যদি লোকসম্মুখে বগল বাজিয়ে বলে বেড়ায় আমি একজন সচেতন ব্যক্তি! তাহলে, এমন ব্যক্তি মহোদয়দের কি করা উচিৎ সেটা পাঠক-ই বিবেচনা করবেন।
এবার মূল কথায় আসা যাক!
আমরা এমন কয়েকজন পথশিশুদের চিনি যারা প্রতিদিন রুটিন মাফিক এলাকা ভিত্তিক বা শহরের অলিগলি অথবা বাস, পার্কে কালেকশন করে থাকে। ছোট্ট একটি কাগজে লিপিবদ্ধ করা থাকে যে, আমার নাম মালা, আমার আব্বুর ক্যান্সারজনিত রোগের কারণে হাসপাতালে শয্যাশয়ী। আপনাদের একান্ত আর্থিক সহায়তা কাম্য। ছোট্ট একটা কাগজে লেখা থাকে এরুপ। একবার এক ছোট্ট বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করা হয় তোমার আব্বু কোন হসপিটালে ভর্তি! এমন বিস্ময়কর প্রশ্ন শুনার জন্য মনে হয় তারা একেবারেই অপ্রস্তুত! কপাল কুঁচকে উত্তর না দিয়েই দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়।
তার মানে অবশ্যই এটি কারো দিকনির্দেশনায় করছে তারা। নাহয়, মানুষের প্রশ্নে তারা আড়াল হয় কেন? কারো জিজ্ঞাসায় বিস্মিত হয় কেন?
এসমস্ত শিশুদের এই অপরাধচক্রগুলো থেকে বের করতে হবে।
তাদের সুশিক্ষায় সঠিক দিকনির্দেশনায় আগামীর পথচলাকে সুদৃঢ় করতে হবে। কিন্তু, তাদের এই দায়িত্ব বহন করবে কারা? যারা দারিদ্রতার কারণে নিজ সন্তানদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়। তাদের কী করবেন?
আমরা তরুণরাই একাজে এক পা এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। যারা ক্ষুধার তাড়নায় মানুষরূপী পশুদের গোলামি করে প্রতিনিয়ত। যারা এমন ঘৃণ্যকাজে হতদরিদ্র পথশিশুদের কাজে লাগিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটে নিচ্ছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক সহায়তা নিব। তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব।
আর যেসমস্ত দরিদ্র পরিবারেরা তাদের অক্ষমতার বিপরীতে নিজেদের সন্তাদের রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছে অযাচিত। আমরা তাদের কাছে যাব, কথা বলব। সামর্থ্যানুযায়ী তাদের সন্তান এবং পরিবারে আর্থিক সহায়তা করব। সন্তানদের স্কুল বা মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিব।
কিন্তু, তরুণরা অনেক কিছু করার ইচ্ছে করলেও অর্থের জন্য তাদের মহৎ কাজগুলোকে নিয়ে সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে পারেনা। এহেন পরিস্থিতিতে, সমাজের বিত্তবান, প্রভাবশালী, রাজনীতিবিদ, এবং সর্বপ্রকার মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত।
বিত্তবান বা সমাজের উঁচুপর্যায়ের লোকদের নিকট আমার আবেদন।
হে প্রিয় সমাজপ্রগতিরা! আপনারা ঘরে বসে নেতৃত্ব দিন। আমরা মাঠেঘাটে কাজ করব দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। দেশের আগামী হুমকির মুখ থেকে দেশকে রক্ষা করব আমরা তরুণরা।

Share:

0 comments:

Post a Comment

Search This Blog

Contact Form

Name

Email *

Message *

Followers