এক.
শনশন করে বাতাস বইছে। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। বৃষ্টি আসতে পারে। ছোট ছোট পায়ে বাসার দিকে এগিয়ে চলছে রায়হান। হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। মনে হচ্ছে কে জানি পিছু নিচ্ছে তার। ইদানিং তার সাথে কেমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছ। চায়ের কাপ থেকে চা উদাও হয়ে যাচ্ছে। বাথরুমে ডুকলে পানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব কেনইবা ডুকছে তার মাথায় ধরছে না।
ভাবতে ভাবতে বাড়িতে এসে পৌঁছায় সে। দরজা খুলে দেয় তার বউ সালমা। মাস দেড়েক আগে তাদের বিয়ে হলো। রায়হানের বিয়ের ইচ্ছে ছিলোনা। তার মাকে খুশি করতেই তার বিয়ে করা।
— এ কি, বৃষ্টিতে ভিজে এলে কেন?
— বৃষ্টি কখন হলো? আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে রায়হান।
— দেখো তোমার সারা শরীর পানিতে ভিজে আছে। আর বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।
রায়হান গায়ে হাত দিয়ে দেখে আসলেই সেই বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে। কিছু না বলে বাথরুমে চলে যায় রায়হান।
দুই.
দরজা বন্ধ করে রায়হান আজকের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতেছে। বৃষ্টির ব্যাপারটা টের পেলো না কেন সেটাই তাকে খুব ভাবাচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো তার রুমের ভেতর কেউ হাঁটতেছে। সে স্পস্ট দেখতে পারছেনা। মনে হচ্ছে খুব চেনা একজন মানুষ।
হ্যাঁ আসলেই তো তার চেনা মানুষ। তার শত্রু সাদ্দাম।
বছর খানেক আগেও সাদ্দাম আর রায়হান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো। কিন্তু সাদ্দাম সেটার সুযোগ নিয়েই তার প্রেমিকা মলিকে বিয়ে করে পেলে। এর থেকেই রায়হান আর সাদ্দাম এর দা-কুমড়া সম্পর্ক।
রায়হান খুব ঘামছে। ক্রোধে তার ভেতরটুকু পেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি গিয়ে মাথাটা পাটিয়ে দিবে।
হঠাৎ দরজা আওয়াজ পায়। তার বউ ডাকছে চা খেতে।
— গামছো কেন?
— না, কারেন্ট নাই যে তাই। গরম পড়ছে খুব।
— কি বলছো এসব? মাথার উপরে ফ্যান চলছে তো।
হা করে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে রায়হান।
তিন.
সালমা ভীষণ চটে আছে। রায়হানের এসব আচরণ একদম ভালো ঠেকছেনা তার কাছে।
রায়হানের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তার সাথে কেন এমন হচ্ছে। সে যতই এসব নিয়ে ভাবতেছে ততই তার পুরোনো দিনের প্রেমটুকু জাগ্রত হচ্ছে। কিন্তু সে এটা চাচ্ছেনা। সব ভুলে গিয়ে সে সুন্দর ভাবে বাঁচতে চায়। সে তার বউকে আজকেই সব খুলে বলবে।
— মন খারাপ? খুব আদরের স্বরে সালমাকে জিজ্ঞেস করলো রায়হান।
অভিযোগের স্বরে উত্তর দিলো।
— না।
রায়হান খুব কাঁপতেছে। আজকে সে সব বলে দিবে।
সালমার কোলে মাথা রেখে রায়হান বলতে লাগলো,
— তোমাকে কিছু বলবো।
— বল
— কিছু মনে করো না। খুব হতাশায় আছি।
— আরে কি হয়েছে বলো সব।
— ইদানিং খুব বাজে কিছু ঘটছে আমার সাথে। মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার সাথে হাটছে। আমার নিমকহারাম বন্ধুটা। চিনো তাকে? আমাকে ঠকিয়ে সে আমার প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।
সালমা তার রায়হানের দিকে তাকাচ্ছে। এমন বিচলিত কখনো তাকে দেখেনি সে। রায়হান বলে যেতে লাগলো।
— চলো কালকে ডাক্তারের কাছে যাই। আমার ব্যাপারটা ভালো লাগছেনা।
— আচ্ছা সকালে যাবো। এখন ঘুমাও। এই বলে সালমা রায়হানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। রায়হান ভাবতেছে। মনে হচ্ছে কেউ জানি তার পাশে এসে বসলো।
চার.
রায়হান নাস্তা খেয়ে রেডি হচ্ছে তার বউকে সাথে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে। তার সবকিছু খুলে বলবে ডাক্তারকে।
রুমে সালমা ডুকতেই রায়হান বলে উঠলো,
— যাবেনা?
— কেন? ডাক্তারের কাছে। কাল রাতে যে বললাম!
— মাথা কি গেছে নাকি? কখন কি বললে? আমি তো এসে দেখলাম তুমি ঘুমোচ্ছে।
রায়হান চুপ করে রইলো। সে যখন শুয়ে পড়েছে, তখন সালমা কিচেনে ছিলো।। এর মধ্যেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল রায়হান। বাকী যে ঘটনা ঘটেছে সবটাই স্বপ্নে। সে সবকিছু ঝট পাকিয়ে পেলেছে। তার বুকের ভেতরে ধুকধুক শব্দ হচ্ছে। এমনটা বেশিদিন চললে সে পাগল হয়ে যাবে।
পাঁচ.
রায়হান শুয়ে আছে। কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। তার আচরণ নাকি স্বাভাবিক নয়। সবাই তাকে পাগল বলে ডাকে। সে টের পাচ্ছে তার পাশে কেউ একজন আছে। এবার কোনো ছেলে নয়। তার প্রাক্তন প্রেমিকা মলি । যাকে সে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেছে। যার
প্রতারণার কথা মনে উঠলে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। যার জন্য তার এই মানসিক যন্ত্রণা সেই তার সামনে বসে আছে।
রাগে রায়হানের দেহে আগুন জ্বলছে। রায়হান তার মাথার নিচের বালিশটা নিয়ে চেপে ধরলো মলির মুখোর উপর। মলি চিৎকার করছেনা।
সে হাসতেছে।
কি অমায়িক হাসি। যে হাসির প্রেমে পড়েছিলো রায়হান।
রায়হান ক্লান্ত হয়ে বালিশ পাশে রেখে তাকিয়ে আছে মলির দিকে। অনেকদিন পরে দেখলো তাকে।
ছয়.
হাত পা বাঁধা অবস্থা সালমার লাশের কাছে দাঁড়িয়ে রায়হান। তাকিয়ে আছে মায়াবী চোখদুটোর দিকে। যেন তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। সে কান্না করতে পারছেনা।
খুব সংশয়ে আছে। সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তবে?
কাল রাতেই তো সালমা তার পাশে ঘুমোলো। কিভাবে মারা গেলো? তার হাত বাঁধা কেন?
নানা প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারছে তার মাথায়। নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে তার পাশে কেউ হাঁটছে। তার বন্ধু সাদ্দাম। তাকে দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে। যগতের সবচেয়ে কুৎসিত হাসি তার মুখে।
সাত.
সালমার মারা যাওয়ার আজকে একবছর। রায়হানের ভাবনার জগতে শুধু এখন সালমা। কবরে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে রায়হান। মনে হচ্ছে তার পাশে সালমা দাঁড়িয়ে আছে। একগাদা অভিমান নিয়ে অন্যদিক ফিরে।
ভাবনার জগতটা যত সুন্দর হয়, মানুষের মস্তিষ্কের তত বিকাশ ঘটে। কিন্তু কিছু ভাবনা জগতকে এলোমেলো করে দেয়। সৃষ্টি করে সংশয়ের, দ্বিধার আর রহস্যের। মিথ্যার আবডালে ডাকা পড়ে সত্য।
তবুও আমরা ভাবি। আমাদের ভাবনা প্রসারিত করি।
দ্বিধাদ্বন্দ্বের এই পৃথিবীতে কত রহস্যের খোঁজে নিজেকে ভাবিয়ে তুলি। ভাবনায় তৈরি করি হাজারো চরিত্র।
যেগুলো আমাদের হাসায়, আমাদের কাঁদায়।গল্প বলে, গান শোনায়, সঙ্গ দেয় একাকিত্বের রাতে।
"কুৎসিত হাসি"
গল্পের ধরন: সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার